মরিতিয়াস! নীল সমুদ্র, সাদা বালি আর সবুজ প্রকৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন। যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন, তাদের কাছে মরিতিয়াস যেন এক স্বপ্নভূমি। কিন্তু এই স্বপ্নের দেশে ঘুরতে গেলে পকেটের দিকেও তো খেয়াল রাখতে হয়, তাই না?
বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে কেমন খরচ হতে পারে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা থাকলে ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আগে থেকে জেনে গেলে শেষ মুহূর্তে অপ্রস্তুত হতে হয় না। এই যেমন ধরুন, ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্কে ট্রেকিং করতে যাওয়া বা প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরে বেড়ানো – সবকিছুরই একটা খরচ আছে।তাহলে চলুন, মরিতিয়াসের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের প্রবেশমূল্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পর্যটকদের জন্য মরিতিয়াসের আকর্ষণীয় স্থানসমূহ এবং প্রবেশমূল্যমরিশাসে বেড়াতে গেলে কিছু কিছু জায়গায় প্রবেশ করার জন্য টিকিট কাটতে হয়। আবার কিছু জায়গা আছে যেখানে কোনো টিকিট লাগে না, যেমন সমুদ্র সৈকত। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় স্থান এবং সেগুলোর প্রবেশমূল্য নিয়ে আলোচনা করা হলো:
ক্যাসela পার্কের অভিজ্ঞতা ও খরচ
ক্যাসela পার্ক মরিশাসের অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্থান। এখানে বিভিন্ন ধরনের পাখি, চিতাবাঘ, সিংহ, জিরাফ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। শুধু দেখাই নয়, এদের সাথে ছবি তোলারও সুযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন রাইড এবং কার্যকলাপ
ক্যাসela পার্কে শুধুমাত্র বন্যপ্রাণী দেখাই নয়, বিভিন্ন ধরনের রাইড এবং কার্যকলাপও উপভোগ করা যায়। যেমন জিপলাইন, কোয়াড বাইকিং, ক্যানিয়ন সুইং ইত্যাদি। তবে এগুলোর জন্য আলাদা করে টিকিট কাটতে হয়।* জিপলাইনের খরচ প্রায় ২০০০ রুপি থেকে শুরু।
* কোয়াড বাইকিংয়ের খরচ প্রায় ২৫০০ রুপি থেকে শুরু।
* ক্যানিয়ন সুইংয়ের খরচ প্রায় ১৫০০ রুপি থেকে শুরু।
খাবার এবং অন্যান্য সুবিধা
ক্যাসela পার্কে খাবারের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। সেখানে ফাস্ট ফুড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। এছাড়াও, পার্কের ভেতরে শপিং করার জন্য স্যুভেনিয়ার শপও রয়েছে।
প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেন: প্রকৃতির মাঝে শান্তি
প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেনটি শুধু মরিশাসের নয়, বিশ্বের অন্যতম সুন্দর বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলোর মধ্যে একটি। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, ফুল এবং ঔষধি গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
বিশাল পুকুর এবং পদ্মফুল
গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ হলো বিশাল পুকুরটি, যেখানে বিভিন্ন রঙের পদ্মফুল ফোটে। এই পুকুরের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো যেন এক স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা।
বিভিন্ন গাছের সমাহার
প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই বিরল। এই গাছগুলোর মধ্যে কিছু গাছের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি।* এখানে জায়ান্ট ওয়াটার লিলি দেখতে পাওয়া যায়, যা দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়।
* বিভিন্ন প্রকার পাম গাছও এই গার্ডেনের অন্যতম আকর্ষণ।
ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্ক: ট্রেকিং এবং প্রকৃতির অপরূপ শোভা
যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্ক একটি অসাধারণ জায়গা। এখানকার সবুজ পাহাড় আর গভীর খাদ যে কারো মন জয় করে নিতে পারে।
বিভিন্ন ট্রেকিং রুট
এই পার্কে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের এবং কঠিনত্বের ট্রেকিং রুট রয়েছে। নিজের শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী যে কোনো একটি রুট বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে ট্রেকিং করার আগে অবশ্যই গাইডের সাহায্য নেওয়া উচিত।
দর্শনীয় স্থান
* ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্কে বিভিন্ন ধরনের জলপ্রপাত রয়েছে, যা ট্রেকিং করার সময় দেখা যায়।
* এখানকার ভিউপয়েন্টগুলো থেকে চারপাশের প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
চামারেল জলপ্রপাত এবং সেভেন কালারড আর্থ: প্রকৃতির বিস্ময়
চামারেল জলপ্রপাত এবং সেভেন কালারড আর্থ মরিশাসের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এই দুটি স্থান প্রকৃতির এক अद्भुत সৃষ্টি।
সেভেন কালারড আর্থের বিশেষত্ব
সেভেন কালারড আর্থ হলো ছোট ছোট টিলার মতো, যেখানে সাত রকমের মাটি দেখা যায়। এই মাটিগুলো বিভিন্ন রঙের হওয়ার কারণ হলো এখানে থাকা খনিজ পদার্থ।
জলপ্রপাতের সৌন্দর্য
চামারেল জলপ্রপাতটি প্রায় ১০০ মিটার উঁচু। এর চারপাশের সবুজ গাছপালা জলপ্রপাতটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। এখানে একটি ভিউপয়েন্ট রয়েছে, যেখান থেকে জলপ্রপাতের পুরো দৃশ্য দেখা যায়।
ইল অক্স সার্ফস: ওয়াটার স্পোর্টস এবং বিনোদন
ইল অক্স সার্ফস মরিশাসের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। এটি ওয়াটার স্পোর্টস এবং বিভিন্ন বিনোদনের জন্য বিখ্যাত।
বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টস
এখানে প্যারা সেইলিং, উইন্ডসার্ফিং, কাইটসার্ফিং এবং আরও অনেক ধরনের ওয়াটার স্পোর্টসের সুযোগ রয়েছে। যারা একটু সাহসী, তারা এই স্পোর্টসগুলো উপভোগ করতে পারেন।
সমুদ্রের সৌন্দর্য
* ইল অক্স সার্ফস এর চারপাশের সমুদ্রের পানি এতটাই পরিষ্কার যে, নিচে থাকা প্রবাল এবং মাছ দেখা যায়।
* এখানে সানবাথিং এবং সুইমিং করার জন্য অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে।
স্থানের নাম | আনুমানিক প্রবেশমূল্য (রুপি) | বিশেষত্ব |
---|---|---|
ক্যাসela পার্ক | ৮০০ – ২০০০ (রাইডগুলোর জন্য আলাদা) | বন্যপ্রাণী এবং বিভিন্ন রাইড |
প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেন | ২০০ | বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও পদ্মপুকুর |
ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্ক | বিনামূল্যে (গাইডের জন্য আলাদা খরচ) | ট্রেকিং এবং প্রাকৃতিক শোভা |
চামারেল জলপ্রপাত এবং সেভেন কালারড আর্থ | ২৫০ | জলপ্রপাত ও সাত রঙের মাটি |
ইল অক্স সার্ফস | বিনামূল্যে (ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য আলাদা) | ওয়াটার স্পোর্টস এবং সমুদ্রের সৌন্দর্য |
মরিতিয়াসের স্থানীয় বাজার এবং কেনাকাটা
মরিতিয়াসের স্থানীয় বাজারগুলো দেশটির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। এখানে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, স্থানীয় পোশাক এবং স্যুভেনিয়ার পাওয়া যায়।
পোর্ট লুইসের সেন্ট্রাল মার্কেট
পোর্ট লুইসের সেন্ট্রাল মার্কেট হলো মরিশাসের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর মধ্যে একটি। এখানে ফল, সবজি, মশলা থেকে শুরু করে সবকিছু পাওয়া যায়। দরদাম করে কেনাকাটা করতে পারলে অনেক কম দামে ভালো জিনিস কেনা সম্ভব।
স্থানীয় হস্তশিল্প
* মরিতিয়াসের স্থানীয় হস্তশিল্পগুলো যেমন কাঠের কাজ, হাতে বোনা কাপড়, এবং ঝুড়ি বেশ জনপ্রিয়। এগুলো কেনার সময় একটু দরদাম করে নিতে পারেন।
* এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় পোশাক পাওয়া যায়, যেগুলো পর্যটকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়।
উপসংহার
মরিশাস ভ্রমণের আগে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের প্রবেশমূল্য সম্পর্কে জেনে গেলে ভ্রমণ পরিকল্পনা করা সহজ হয়। এই তথ্যগুলো আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।মরিশাসের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর এই তালিকাটি আপনার ভ্রমণকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলবে। প্রতিটি স্থানের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনার অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে। তাই, আর দেরি না করে আপনার পরবর্তী ভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করে দিন!
শেষ কথা
আশা করি, মরিশাসের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং তাদের প্রবেশমূল্য সম্পর্কে এই ব্লগ পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। মরিশাস ভ্রমণকালে এই তথ্যগুলো আপনাদের কাজে আসবে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে নির্দ্বিধায় কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের সুন্দর এবং আনন্দময় একটি ভ্রমণ হোক, এই কামনা করি।
দরকারী কিছু তথ্য
১. মরিশাসের মুদ্রা রুপি (Rupee), তাই রুপি সাথে রাখুন।
২. ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন।
৩. সানস্ক্রিন, টুপি এবং সানগ্লাস নিতে ভুলবেন না।
৪. স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
৫. জরুরি অবস্থার জন্য কিছু শুকনো খাবার সাথে রাখুন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
ক্যাসela পার্কে রাইডগুলোর জন্য আলাদা টিকিট কাটতে হবে।
প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা দেখতে পাবেন।
ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্কে ট্রেকিং করার সময় গাইডের সাহায্য নিন।
চামারেল জলপ্রপাত এবং সেভেন কালারড আর্থ প্রকৃতির अद्भुत সৃষ্টি।
ইল অক্স সার্ফস ওয়াটার স্পোর্টস এবং বিনোদনের জন্য সেরা।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: মরিতিয়াসের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর কয়েকটির নাম বলুন তো?
উ: মরিতিয়াসে ঘোরার মত অনেক সুন্দর জায়গা আছে! তবে কয়েকটা খুব জনপ্রিয় হল প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেন, ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্ক, চামারেল সেভেন কালারড আর্থ, এবং কাসela বার্ড পার্ক। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না জায়গাগুলো কতটা সুন্দর!
প্র: মরিতিয়াসের দর্শনীয় স্থানগুলোতে প্রবেশের জন্য টিকিটের দাম কেমন হতে পারে?
উ: দেখুন, টিকিটের দাম একেক জায়গায় একেক রকম। প্যাম্পলেমাস বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ করতে সম্ভবত ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২০০-৩০০ রুপি লাগতে পারে। ব্ল্যাক রিভার গর্জেস ন্যাশনাল পার্কে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই, তবে গাইডের সাথে ট্রেকিং করতে গেলে খরচ হবে। চামারেল সেভেন কালারড আর্থ-এর টিকেট কাটতে খরচ হবে প্রায় ২৫০-৩৫০ রুপি। আর কাসela বার্ড পার্কে বিভিন্ন প্যাকেজ আছে, তাই দামও ভিন্ন হয় – মোটামুটি ১০০০ রুপি থেকে শুরু করে আরও বেশি লাগতে পারে।
প্র: মরিতিয়াসে ঘোরার সময় খরচ কমানোর কোনো উপায় আছে কি?
উ: খরচ কমাতে চাইলে লোকাল বাসে যাতায়াত করতে পারেন, যা ট্যাক্সির চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। এছাড়া, গেস্ট হাউসে থাকলে হোটেলের চেয়ে খরচ কম হবে। আর হ্যাঁ, দামাদামি করতে ভুলবেন না!
অনেক দোকানেই দর কষাকষি করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আগে থেকে অনলাইনে টিকেট কাটলে কিছু ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। আমি নিজে এই টিপসগুলো কাজে লাগিয়ে বেশ কিছুটা খরচ কমিয়েছিলাম!
📚 তথ্যসূত্র
Wikipedia Encyclopedia
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과